চা পাতা দিয়ে জৈব সার তৈরি এবং ত্বকের যত্নে
চা পাতা দিয়ে জৈব সার তৈরির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের আলোচনা। চা পাতা একটি সম্পূর্ণ অর্গানিক বা জৈব সার । প্রত্যেক মানুষেরই বাগান খুব পছন্দের। বাগানকে ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন রকম উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে থাকে। চা পাতা দিয়ে কিভাবে জৈব সার তৈরি করতে পারি এবং কি পরিমাণ গাছে দেওয়া উচিত এই সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান থাকা দরকার।
চা ও গাছের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা নিবিড়। যারা গাছ ভালবাসে, বাগান তৈরি করেন তারা নিশ্চয়ই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। গাছের যত্নে অনেকেই চা পাতা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। চা পাতা খুব ভালো জৈব সার। এই সার ব্যবহার করলে গাছ দ্রুত বড় হয়।
ভূমিকাঃ
চা পাতা আমরা ফেলে না দিয়ে গাছে দেওয়ার জন্য রেখে দিতে পারি। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা আমরা চা খেয়েই থাকি সেজন্য এই চা পাতা নষ্ট না করাই ভালো।নষ্ট না করে গাছের জন্য রেখে দিলে খুব ভাল উপকার হবে। চা পাতা গাছের গোড়ায় সরাসরি ঢেলে দেন, কেউ আবার কয়েকদিন রেখে জৈব সার বানিয়ে কাজে লাগান। চা পাতা সরাসরি গাছের গোড়ায় না দেওয়াই ভালো ।কারণ চা পাতায় চিনি থাকার কারণে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ গোবর থেকে জৈব সার তৈরির নিয়ম।
চা পাতা সার তৈরির জন্য চা পাতা সংগ্রহঃ
আমরা বাড়িতে কমবেশি সবাই চা পান করে থাকি। চা তৈরি করার পর চা পাতাগুলো ডাস্টবিনে না ফেলে, ছোট কোন পাত্রে রেখে দিতে পারি। ২ অথবা ৪ চারদিন পর একটু বেশি হলে। সেগুলোকে আমরা ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে নেব। ধোয়ার কারণ হলো- চায়ের পাতায় প্রচুর পরিমাণে দুধ চিনি থাকে, যা গাছের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। সেজন্য চা পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে নেব। দুধ ও চিনি বের করে দেওয়ার জন্য। তারপর এগুলোকে এক দুই দিন রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে।
শুকানোর পর এগুলো গাছে ব্যবহার করতে হবে। যেকোনো ধরনের চা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। চায়ের পাতায় প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন থাকে সেজন্যই একে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার বলা হয়। ফসফরাস, পটাশ এগুলো অনেক কম থাকে। চা পাতায় ট্যানিক অ্যাসিড রয়েছে। বেশিরভাগ গাছ ট্যানিক এসিড পছন্দ করে, সেজন্য গাছে চা পাতার সার ব্যবহার করা হয়, গাছের এসিডের অভাব পূরণ করার জন্য। যেমন টমেটো, গোলাপ বা পাতা ওয়ালা যে কোন গাছের ক্ষেত্রে এই সার খুবই উপযুক্ত।
নাইট্রোজেন সাধারণত গাছের বৃদ্ধি, বিকাশ, কোষ এবং ক্লোরোফিল তৈরিতে সাহায্য করে। সালোকসংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং গাছকে বড় হতে ও সতেজ হতে সাহায্য করে। ফুল ও ফলের ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, ফসফরাস ও পটাশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
টবের মাটির সঙ্গে চা পাতা খানিকটা মিশিয়ে নিতে হবে। চা পাতা টবের মাটিকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। টবে পানি দিলে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। টবে চা পাতা দিলে টবের ওজন অনেকটাই কম হয়।
গাছের চা পাতা সারের সঠিক ব্যবহারঃ
টবের মাটি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। তখন রুটকে ঠান্ডা রাখার জন্য আমরা যদি এক দুই ইঞ্চি চা পাতা সার মালচিং করে দিই, তাহলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত জল ধরে রাখতে পারবে। টবের মাটিকে ঠান্ডা রাখবে, শিকড় সুস্থ থাকবে। গাছে নতুন নতুন পাতা বের হবে এবং গাছও বৃদ্ধির পাবে।
৫ ইঞ্চি টবের জন্য এক দুই চামচ দিতে পারি, কম বেশি হলে সমস্যা হবে না, কারণ এটা জৈব সার। গোড়ার মাটিকে একটি খুঁড়ে দেবো তারপরে চা পাতার সার প্রয়োগ করবো। বড় টবে বেশি দিতে হবে আর ছোট টবে কম দিতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর একটু জল দিতে হবে। এই চা পাতার সার আমরা ১৫ দিন পর পর দেবো।
কাপড় ভালো রাখতেঃ
আলমারিতে অনেক দিন কাপড় রাখলে পুরানো কাপড়ের গন্ধ বের হয়। ব্যবহৃত চা পাতা টিস্যু তে মড়িয়ে আপনি আলমারিতে রেখে দেন, তাহলে কাপড় ভালো থাকবে। পোকামাকড়ের থেকে রেহাই পাবেন।
জুতার যত্নেঃ
ঘেমে যাওয়ার ফলে জুতায় প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হয়। এই গন্ধ থামানোর জন্য চা পাতা ব্যবহার করে আপনি উপকৃত হতে পারেন। বাইরে থেকে এসে প্রতিদিন দুটি টিস্যু পেপারে অল্প করে চা পাতা মুড়ে সকাল পর্যন্ত জুতায় রেখে দিন। তাহলে আর জুতার ভেতর থেকে গন্ধ বের হবে না।
কন্ডিশনার হিসেবেঃ
চুলের যত্নে বাড়িতে তৈরি করে নিতে পারেন কন্ডিশনার। চা পাতা অনেক সময় জাল দিয়ে গাঢ় ঘন লিকার তৈরি করে নিন।এরপর ঘন লিকারটি ঠান্ডা হয়ে গেলে, তারপর আপনি চুল শ্যাম্পু করে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এভাবে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। চাইলে পানি দিয়ে হালকা করে ধুয়ে নিতে পারেন,না ধুলেও সমস্যা নেই। এটি ব্যবহার করলে চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে। যে কোন ধরনের চুলে ব্যবহার করা যাবে।
কার্পেট পরিষ্কার করতেঃ
আধা ভেজা চা কার্পেটে ছড়িয়ে দিন।এরপর এই চা শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে ভ্যাকুম ক্লিনার দিয়ে। গন্ধ এবং ময়লা দুটোই ঠিক হয়ে যাবে।
পা পরিষ্কার করতেঃ
শীতে পায়ের পাতা ও গোড়ালি ময়লা হয়ে যায়। এই ময়লা পরিষ্কার করার জন্য চা পাতা গরম পানিতে ঢেলে পা চুবিয়ে রাখুন। তাহলে পায়ের সকল ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কেটে গেলেঃ
শেভ করতে গেলে অনেক সময় মুখ কেটে যায়? টি ব্যাগ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে কাঁটা স্থানে লাগিয়ে রাখুন।তাহলে আপনার রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
চোখের কালো দাগ নিরাময়েঃ
প্রচন্ড কাজের চাপে অথবা ঘুম কম হওয়ার কারণে চোখের নিচে ফোলা ভাব বা চোখ লাল হয়ে যাই। সেই সঙ্গে কালো দাগের সমস্যা তো রয়েছে।এই সমস্যা দূর করার জন্য টি-ব্যাগ অথবা চা পাতা টিস্যুর মধ্যে নিয়ে ২০ মিনিট চোখের ওপর রেখে দিন। দেখবেন সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। এটি ব্যবহার করলে কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
ত্বকের কালো ভাব দূর করেঃ
টনিক অ্যাসিডের কারণে ত্বকে যে কালো ভাব দেখা দেয় চা ব্যবহার করলে সেটা ভালো হয়ে যায়। ব্যবহার করা চা পাতা ওই স্থানে ধরে রাখতে হবে। এছাড়া আমাদের ত্বক রোদে পুড়ে গেলেও সরাসরি মুখে ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে আপনার পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে।
চা পাতা স্কাব হিসেবে ব্যবহার হয়ঃ
ব্যবহার করা চা পাতা আপনি ফেলে না দিয়ে রেখে দিতে পারেন। এই রেখে দেওয়ার চা পাতা স্কার্ব হিসেবে ব্যবহারিত হয়। চা পাতা শুকিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তারপর আপনি মুখে যে কোন মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। চা আপনার ত্বকে উজ্জ্বল, নরম ও মসৃণ করে তোলে।
শেষ কথাঃ
চা পাতা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চা পাতা গুনের শেষ নেই। এটি ব্যবহার করার ফলে গাছের যেমন উপকার হয়। তেমনি মানুষের ত্বকের কাজেও ব্যবহার হয়। এই কনটেন্টি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক সাবস্ক্রাইব করে দিবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url