ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিদিন একটু একটু করে খাদ্য ভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সপ্তাহে একটু একটু করে পরিবর্তন করতে থাকলে কম খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাবে। এই অভ্যাস গড়ে উঠলে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবো। ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু তারা সবসময় সুস্থ থাকতে পারে না।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা


ভূমিকাঃ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তারা প্রায় সময় অসুস্থ থাকতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সঠিক খাদ্যভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে এমন সমস্যা আর হবে না।ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা ছোট করার প্রয়োজন হয় না। তারা চাইলে পেট ভরে খেতে পারবেন। শর্করা যেমন ভাত, রুটি, মিষ্টি, পান্তা এমনকি অনেক ফল খাও নিষেধ।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?

ডায়াবেটিস হলে কিছু কিছু খাবার খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিতে হবে তা নয়। আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবেন কিন্তু পরিমাণ মতো খেতে হবে।

বৈচিত্র্যময় খাবার খাওয়াঃ

 প্রতিদিন একই ধরনের খাবার না খেয়ে, বিভিন্ন রকমের ফলমূ্‌ল, শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমনঃ লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও আলু।

এসব খাবার কমিয়ে দিনঃ

 চিনি, লবণ ও চর্বি জাতীয় খাবার একেবারে কমিয়ে দিন। যতটুকু হাওয়া প্রয়োজন ততটুকুই খাওয়া উচিত।

সময়মতো খাবার খানঃ

 সকালের নাস্তা, দুপুরের ও রাতের খাবার ঠিক সময় মত খেতে হবে। এক ঘন্টা আগেই কি পরে খাওয়া যাবে না ঠিক সময় মতই খেতে হবে।

এই রুটির অনুযায়ী খাবার খেলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। এই রুটির অনুযায়ী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করন। তাহলে আস্তে আস্তে আপনার পরিবর্তন এসে যাবে।

ডায়াবেটিকস রোগীর খাদ্য তালিকায় যা যা থাকতে হবেঃ

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পাঁচটি পদের খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এসব হচ্ছে-
  • ফলমূল ও শাক-সবজি।
  • স্বেতসার সমৃদ্ধ খাবার। লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। যেমনঃ ডিম, মাছ, মাংস,শিম, ডাল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম।
  • দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার। যেমনঃ দই, ছানা ও পনির।
  • বিভিন্ন ধরনের তেল, মাখুন, ঘি।

সুষম খাদ্য ভ্যাসের অর্থ হল কিছু খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া এবং কিছু খাবার অল্প পরিমানে খাওয়া। একই ধরনের খাবার দেহের সকল পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এ পাঁচটি গ্রুপের খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করা প্রয়োজন। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে।

ফল ও সবজি

ডায়াবেটিস রোগীরাও পেট ভরে খেতে পারবেন। কারণ আমাদের দেশে ফল ও বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি রয়েছে। ফল ও শাকসবজিতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে, এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ হয়েছে। শর্করা যুক্ত সবজিগুলো না খাওয়াই ভালো। টমেটো ,শসা্‌বেগুন এবং সবুজ সবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। 

এই সবজিগুলো কাঁচা কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়। বেগুন আঁচ দিয়ে সেদ্ধ করে ভর্তা করা যায়। আবার ফুলকপি মাশরুম সেদ্ধ করেও খেতে পারবে। অলিভ অয়েল দিয়ে খাবার রান্না করে খেতে পারেন। কিন্তু অলিভ অয়েল এর দাম অনেক বেশি তাই এটা অনেকেই কিনতে চায় না।
  • ফল ও শাকসবজি খেলে পরিপাকতন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করে।
  • আপনার শরীরের হাটের বিভিন্ন সমস্যা, স্ট্রোক ও ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা রাখে।

ডায়াবেটিস রোগী কোন ফল ও শাকসবজি খেতে পারেন?

  • বাঙ্গি বা জাম্বুরা খেতে পারেন, সাথে একটু টক দইও মিশিয়ে নিতে পারেন। বিভিন্ন সময়ের মৌসুমী ফল খেতে পারেন।
  • খেজুর ,আলুবোখারা খাওয়া যাবে।
  • গাজর, মটর শুঁটি, বরবটি ও শিম খাওয়া যাবে।
  • শর্করাযুক্ত শাক-সবজি যেমন মাশরুম, শসা, পালং শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি,ব্রকলি ওলেটুশ পাতা খাওয়া যাবে।
  • বরই ও তরমুজ খাওয়া যাবে।

চিনি ছাড়া চা খাওয়ার অভ্যাসঃ

চায়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আপনি ব্লাক টি বা গ্রিন টি খেতে পারেন। প্রায় মানুষ এখন গ্রিন টি পছন্দ করেন। ব্ল্যাক টি বেশি ব্যবহার হয় না। সকাল ও সন্ধ্যায় গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এই চা খাওয়ার ফলে আপনার শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

চর্বি জাতীয় খাবারঃ

ডায়াবেটিস রোগীদের চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না এমন কোন বাধা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়ায় ভালো। অলিভ অয়েল দিয়ে কিছু সালাত খেতে পারে। এতে আপনার শরীরের কোন ক্ষতি হবে না।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ

ডিম ও মাছ-মাংসের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে। খাদ্য তালিকায় লাল মাংস যেমন গরুর মাংস একেবারে খাওয়া যাবেনা।লিন মিট যেমন মুরগির মাংস, কোয়েলের মাংস ও কবুতরের মাংস খাওয়া যাবে।

সামুদ্রিক মাছ সহ বিভিন্ন ধরনের তৈলাক্ত মাসে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি থাকে, যা হার্টকে সুরক্ষা রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে সিম, বরবটি,ডাল ও বিভিন্ন রকমের বাদাম। এই খাবার গুলো খেলে ডায়াবেটিস রোগীর প্রোটিনের ঘাটতি আর থাকবে না।
  • এগুলো আপনার পেশীকে সুস্থ রাখে।
  • তৈলাক্ত মাছ খেলে হার্ট সুস্থ থাকে।
  • সপ্তাহে এক দুই দিন তৈলাক্ত মাছ খাবে , প্রতিদিন মাংস খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

দুধ ও দুধাজাত খাবারঃ

দুধ, পনির ও দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে, যা আপনার হার দাঁত ও পেশিকে খুব শক্তিশালী করে তোলে। দুগ্ধজাত খাবারের প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে, যার রক্তে ক্ষতি কর কোলেস্টোরেলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এজন্য কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে।

এসব খাবার খাওয়া কমানোর উপায়ঃ

  • বাড়িতে রান্না করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে আপনি কি পরিমান লবণ খাচ্ছেন সেটা বোঝা যাবে।
  • চিনি ছাড়া চা কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাঝে মাঝে ফলের জুস খেতে পারেন।
  • খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
  • বাহিরের সস খাওয়া যাবেনা। বাড়িতে তৈরি করে সস খেতে পারবে।

শেষ কথাঃ

ডায়াবেটিস রোগে যেসব ব্যক্তি ভুগছে তাদের সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে। কারণ তারা বেশি ভালো-মন্দ খাবার খেতে পারেনা। তাদের সবকিছু পরিমান মত খেতে হবে। সঠিক খাদ্যভ্যাস গড়ে তুললে ঘন ঘন খুদা লাগার প্রবনতা কমানো যায়। সেখানে ভাতের জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। আর এইগুলো খাবার ঠিকমত খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা এই খাবারগুলো আমাদের খেতে হয়। এই আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের কাছে শেয়ার করবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url