সজনে পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের ১২টি উপকার মিলবে
আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি সবজি সজিনা বা সজনে পাতা। সজনের ডাটা সবজি হিসেবে দারুন জনপ্রিয়। আবার সজনের পাতাও খাওয়া অনেক আগে থেকে চলে আসছে।আজকাল আবার অনলাইনে সজনের গুড়া পাওয়া যায়, ইংরেজিতে একে মরিঙ্গা পাউডার হিসেবে পরিচিত।
সজনেতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেক মানুষই জানেনা। কি আছে সজিনাতে? কেনই বা একে সুপারফুড বলা হয়।
ভূমিকাঃ
সজনে পাতায় পুষ্টিগুণের ভরপুর। একে পুষ্টির ডিনামাইট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সব সময় সজিনা পাতা পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে এই গাছের ডাল রোপন করা হয়।
সারা বিশ্বে ১৩ প্রজাতির সজিনা পাওয়া যায়। এই গাছ যেখানে সেখানে লাগানো হয়, বাড়ির আঙিনায়, পুকুরের ধারে।এই গাছের বাকল, শুঁটি, পাতা, বীজ, শিকড় ও ফুলসহ গোটা অংশ খাওয়া যায়।
সুপার ফুড সজনে পাতাঃ
সজনে পাতাকে অলৌকিক পাতা বলা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর পাতা। গবেষণায় সজনে পাতাকে নিউট্রিশন সুপার ফুড উপাধি দিয়েছেন, একই সঙ্গে সজিনা গাছকে বলা হয় মিরাকল ট্রি।
শরীরের জন্য বিশেষ উপকারি এই পাতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। সজনে পাতার নানা গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। লেবুর থেকে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এটি আমাদের দেহের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রতিটি মানুষের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ
সজনে পাতায় ডিম থেকে প্রায় দুই গুন বেশি প্রোটিন রয়েছে এবং দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে।অন্ধত্ব দূর করতে সজনে ডাটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাজরের থেকে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ রয়েছে। এটি খাওয়ার ফলে অন্ধত্ব দূর হয়ে যাবে।
সজনে পাতা খেলে অ্যানিমিয়া দূর হয়ে যায়। শাকের তুলনায় ২৫ গুন বেশি আয়রন রয়েছে। কলার থেকে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। শরীরের পুষ্টি উপাদান পূরণ করতে সজনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক চামচ সজনে পাতার গুড়া খেলে দুধ খাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
সজনে পাতার উপকারিতাঃ
- এটি রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে।
- হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হলে সেই ব্যথা দূর করে।
- পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন খাবার হজম না হওয়া, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস, বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- হার ও দাঁতের সুরক্ষা রাখে।সজনে পাতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা দাঁত ও হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে, যার রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
- সজনে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি চোখের রোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই ভালো একটি উপাদান। যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তারা একটু একটু করে নিয়মিত সজনে পাতা খাবেন। তাহলে চোখ অনেক ভালো হবে।
- সজনে পাতা খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয় না।
- রক্তের শর্করা এবং ইনসুলিনের এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখবে সাহায্য করে সজনে পাতা।
- ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার কে রক্ষা করতে সাহায্য করে সজনে পাতা।
সজনে পাতা কিভাবে খাবেনঃ
সজনেপাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে-
- রোদে শুকিয়ে গুড়া করে খাওয়া যেতে পারে।
- সজনে পাতা ব্লেন্ড করে জুস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
- চায়ের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- শাকের মতো ভেজে খাওয়া যেতে পারে আবার সেদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। রান্না করলে ভিটামিন সি অনেকাংশ কমে যায়।
- কোন কিছুই বেশি খাওয়া ভালো নয়। এজন্য এটি একটু বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো।১০-১৫ দিন খাওয়ার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে খেতে হবে। এই বিরতি দিয়ে খাওয়ার ফলে আপনার শরীর ভালো থাকবে।
সজনে পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেনঃ
- সজনে পাতার অনেক উপকারিতা থাকলেও এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে বিভিন্ন রকম সমস্যা হবে।
- সজনে পাতা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব হয়,পেটের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়।
- ব্লাড প্রেসারের ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি যদি সজনে পাতার গুঁড়া বা রস খেয়ে থাকি তাহলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
- সজনে পাতার সঙ্গে যে ডালগুলো থাকে সেটা দেহের জন্য ক্ষতিকর।
- গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। সজনের পাতা সংলগ্ন ডালে যে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে সেটি শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের অনেক ক্ষতি হবে। এজন্য গর্ভকালীন সময়ে সজনে পাতা না খাওয়াই ভালো।
- হাইপো থাইরয়েড বা যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা সজনে পাতাকে একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করবেন না।
- ডায়াবেটিস রোগীরা অনেকে মনে করেন যে,সজনে পাতা খেলে রক্তের সুগার ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটা ঠিক নয়।ডায়াবেটিস রোগীরা ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি সজনে পাতার জুস বা গুঁড়া খেলে এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
শেষ কথাঃ
পরিশেষে বলা যায় যে সজনে পাতায় প্রচুর পুষ্টিগুনে ভরপুর। সজনে পাতা খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকম অসুখ ভালো হয়ে যায়।সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন। ফলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। তাহলে এই পোস্টটি পড়ুন এবং আমাদের সাথে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url