তুলসী পাতার ১১টি উপকারিতা ও অপকারিতা


তুলসী পাতার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই পাতা এতই যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাতা যা কারো সাথে তুলনা করা যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।বাড়ির যে কোন জায়গায় তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখলে সেইখানে হয়ে যায়।হিন্দুদের কাছে তুলসী গাছ একটি পবিত্র গাছ। তুলসী পাতা পূজার ভোগে ব্যবহার করে থাকি। তুলসী পাতা শুধু পূজার কাজে ব্যবহার হয় না, এটি রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়।
তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আগেকার দিনের মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে ঔষধ সেবন করতো।তুলসী পাতা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়। তুলসী গাছের পাতা, বীজ, বাকল ও শেকড় সবকিছুই অতিপ্রয়োজনীয়। ঔষধি গুনে ভরপুর এই তুলসী বিভিন্ন রোগ সারাতে কাজ করে। ফুসফুসের দুর্বলতা, কাশি, শ্বাস কষ্ট, সর্দি জ্বর, চর্মরোগ ইত্যাদি তুলসী দিয়ে তৈরি ঔষধ বিশেষভাবে কার্যকরী।


মশার কামড় থেকে বাঁচতে হলে মশারি টাঙ্গানো,অ্যারোসল স্প্রে করা অথবা কয়েল জ্বালানোর প্রয়োজন হবে না। যদি তুলসী থাকে ঘরে।

ভূমিকাঃ

শিশু থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষ তুলসী পাতা খেতে পারে। বাচ্চাদের সর্দি- কাশি হলে মধুর সঙ্গে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ালে সর্দি-কাশি কমে যাবে। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলা এক গ্লাস পানিতে তুলসি পাতা, আদা ও চা পাতা ভালো করে ফুটিয়ে এর সঙ্গে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করলে আরাম পাবে। মাথা ব্যথা কমাতে তুলসির চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতা ফুটিয়ে গার্গেল করলে গলা ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

ভারতে চার ধরনের তুলসী দেখা যায়-
  • রাম তুলসী
  • কৃষ্ণ তুলসী
  • ভানা তুলসী
  • কাপুর তুলসী

তুলসি পাতার উপকারিতাঃ

সর্দি কাশি কমিয়ে দেয়:

তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে সর্দি কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।বুকে কফ জমার ফলে আপনি যদি প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা, আদা ও চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান তাহলে দ্রুত আপনার বুকের কফ জমা ভালো হয়ে যাবে। এটি খাওয়ার ফলে আপনি আরাম অনুভব করবেন।

গলা ব্যথা দূর করতেঃ

গলা ব্যথা সমস্যা থাকলে আপনি যদি প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা খান। তাহলে আপনার এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে তুলসী পাতা বেশ উপকারী। তুলসী পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গারগিল করলে গলা ব্যথা দ্রুত ভালো হয়ে যায়। মাথাব্যথা ও শরীরের ব্যথা ভালো করে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ

রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে তুলসী পাতা। তুলসী পাতার রস খেলে দ্রুত আপনার জ্বর ভালো হয়ে যাবে।অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি এইগুলোর মোকাবেলা করে তুলসীপাতা।তুলসী পাতা ও এলাচ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কোন জায়গায় কেটে গেলে সেই স্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।

ওজন কমাতেঃ

তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা দুটোই ঠিক থাকে। সেজন্য খুব সহজে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়। তুলসীর চা শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ

ক্যান্সার একটি মরণঘাতী অসুখের নাম। তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে এই অসুখ দূরে রাখতে সাহায্য করে। এই পাতায় রয়েছে রেডিও প্রটেকটিভ উপাদান যা টিউমারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় ফাইটো কেমিক্যাল উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।পাশাপাশি দূর করে বেস্ট ক্যান্সারও।

ডায়াবেটিস দূরে রাখেঃ

ইন্সুলিন উৎপাদনের কাজ করে এই তুলসী পাতা।প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খেলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে যায়। সেই সাথে এই পাতা এন্টি ডায়াবেটিক ঔষধের মত কাজ করে।এজন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তুলসী পাতা খেতে পারন।

হার্টের সুরক্ষায়ঃ

হার্টের সমস্যায় তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ তুলসী পাতা রক্তের জমাট বাধা দূর করে পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

চোখের সমস্যা সমাধানেঃ

যাদের চোখের সমস্যা রয়েছে তাদের তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ তুলসী পাতায় রয়েছে এন্ট্রি- ইনক্লেমেটরি উপাদান, যা আমাদের চোখের সমস্যা সমাধানে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। তাই চোখের সমস্যা হলে তুলসী পাতা বা রস খেতে পারেন। আবার এই সমস্যা দূর করার জন্য কয়েকটি তুলসী পাতা রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ওই পানি দিয়ে সকালবেলা চোখ ধুয়ে ফেলুন।

ব্রণ দূর করতেঃ

ব্রণের দাগ দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতা রয়েছে। তুলসী পাতার পেস্ট বানিয়ে এর সঙ্গে চন্দন মিশিয়ে মুখে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর জল দিয়ে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।এর ফলে আপনার ব্রণের দাগ পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। 

ত্বক পরিষ্কার রাখতেঃ

ত্বক পরিষ্কার রাখতে তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ এই পাতায় রয়েছে এন্টিবায়োটিক উপাদান।যা ত্বকের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

পেট পরিষ্কারেঃ

পেট পরিষ্কার রাখতে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের তুলসী পাতা খুবই কার্যকরী। পেটে ব্যথা থাকলে তুলসী পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে খেলে পেট ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

তুলসী পাতার অপকারিতাঃ

তুলসী পাতা যেমন উপকার রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, তুলসী পাতার অপকারিতা সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময়ঃ

গর্ভাবস্থার সময় বা মা হওয়ার পর স্তন্যপান করানোর সময় অল্প পরিমাণে তুলসী পাতা খাওয়া ভালো তবে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো।অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে মহিলাদের বন্ধ্যক্তের কারণ হতে পারে। এজন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।

রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ

অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে শরীরের রক্ত প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্ত জমাট হওয়ার প্রবণতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সার্জারি করার দুই সপ্তাহ আগে থেকে তুলসী পাতা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

নিম্ন রক্তচাপঃ

অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকে তুলসী পাতায় যার ফলে কমে যেতে পারে রক্তচাপ। তাই নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো।

লেখকের মন্তব্যঃ

তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে এত যে উপকার হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। এজন্য নিয়মিত অল্প পরিমাণে তুলসী পাতা খাবেন। বেশি পরিমাণে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাহলে আপনার উপকার অবশ্যই হবে।তাহলে এই পোস্টটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url