সোনারগাঁও একটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান


সাধারণত অতীত ঘটনার স্মৃতিবিজাড়িত স্থানকে ঐতিহাসিক স্থান বলা হয়। বাংলাদেশের সোনারগাঁও ইতিহাস বিখ্যাত এমন একটি স্থান, যেখানে অতীতের অনেক উত্থান- পতনের ঘটনা রয়েছে।যারা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পাশে থাকতে পছন্দ করে তারা নিঃসন্দেহে যেতে পারেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে। ছুটির দিনে সবাই মিলে বেরিয়ে আসতে পারে এই দর্শনীয় স্থান। তাহলে সবার মন ভালো থাকবে। যদি পরিবারের ছোট বাচ্চা থাকে তাহলে সেই বাচ্চারও প্রাচীন ইতিহাসের অনেক কিছু দেখার সাথে সাথে জানা ও হয়ে যাবে অনেক কিছু।যা ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে লাগবে।
সোনারগাঁও একটি দর্শনীয় স্থান

সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ জেলার উপজেলা। ঢাকা থেকে ২৭কিলোমিটার দক্ষিণ- পূর্ব দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে এর অবস্থান। ঐতিহাসিক স্থান সোনারগাঁও একটি প্রাচীন নগরী। এর আগে নাম ছিল সুবর্ণগ্রাম।আবার অনেকের মতে বারো ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়েছে। এই উপজেলাটি মুঘল আমলে বাংলার রাজধানী ছিল।এই অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন ঈশা খাঁ।

সোনারগাঁও এর ইতিহাসঃ

সোনারগাঁও শুধু প্রাসাসনিক গুরুত্ব ও রাজধানী হবার কারণে বিখ্যাত হয়ে ওঠেনি। সোনারগাঁও সুবিখ্যাত হয়েছিল অর্থনৈতিক প্রাচুর্য্য, ভূমি বিন্যাস, কৃষি উপকরনাদি নির্মাণ ও তার নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্য। শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য সোনারগাঁও ছিল বাংলাদেশের এক গৌরবময় জনপদ।

সোনারগাঁও গিয়ে যা যা দেখবেনঃ

সোনারগাঁয়ে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, পানাম সিটি, বাংলার তাজমহল, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম, জামদানি শিল্প।বাংলার তাজমহল ছাড়া বাকি জায়গা খুব কাছাকাছি।

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরঃ

প্রবেশ পথেই একটি ভাস্কর্য আছে। একজন লোক গরুর গাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। জাদুঘরের সামনে সুন্দর কারুকাজ ও নকশায় সজ্জিত রয়েছে। জাদুঘরের ভবনের সামনে একটি বিশাল দিখী রয়েছে। তিনদিকে বাঁধানো ঘাট একপাশের ঘাটের দুই পাশে দুটি ঘোড়ায় সৈন্যের মূর্তি রয়েছে। এই ফাউন্ডেশনে ১টি জাদুঘর,১টি লোক মঞ্চ, সেমিনার রুম ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে।


প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রাচীন নির্দেশন রয়েছে এই জাদুঘরে। এই জাদুঘরে রয়েছে গ্রাম বাংলার প্রাচীন শিল্পীদের সুনিপুন হাতের তৈরি বিভিন্ন শৈল্পিক ও দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য পর্ণ সামগ্রী।এ হস্তশিল্পরা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলেছেন। গ্যালারিতে দেখা যাবে কাঠের খোদায় করা শিল্প, কারু শিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, পোড়ামাটির ফলক, কাঁসা-তামা লোহা ও পিতলের জিনিসপত্র ইত্যাদি নিদর্শন।

পানাম সিটিঃ

পানাম নগরী সোনারগাঁও থেকে আধা- কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। একটি “হারানো নগরী” নামে পরিচিত।” হারানো নগরী” নামে পরিচিত হবার কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এটির জনজীবন ছিল পানাম নগরীতে যা এখন বিলীন, শুধু স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে।নগরের ভেতর রাস্তার দুই পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাল ইটের নির্মিত স্থাপত্য ভবন যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে পানাম নগরী। উভয় পাশে মোট ৫২ টি প্রাচীন বাড়ি রয়েছে যা পানাম নগরের মূল আকর্ষণ।

প্রধানত ব্যবসায়ী ও জমিদাররা বাস করত এই পানাম নগরীতে। তাঁতি ব্যবসায়ীদের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও আবাসস্থল ছিল। এই স্থান হতে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁত ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পানাম নগরীর দুই রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা অট্টলিকা, মসজিদ, মন্দির,মঠ, ঠাকুর ঘর , গোসলখানা, কূপ, নাচ ঘর ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান। পানাম নগরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে পঙ্খিরাজ খাল। যা বিভিন্ন রকম গাছ গাছালি দিয়ে ঘেরা ।

শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমঃ

সোনারগাঁ উপজেলার বারদী বাজারের উত্তর-পশ্চিম কোণে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম অবস্থিত। প্রতিবছর উনিশে জ্যৈষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মহাপুরুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারী তিরোধান উৎসব পালন করেন। ১২৯৭ সালের এই দিনে মহাপুরুষ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী মৃত্যুবরণ করেন। তার এই মহাকাল প্রণয়নের দিনটি মানুষ ভক্তি ভরে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করে।

 তিরোধান উৎসবে অংশগ্রহণ করতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকা সহ দেশের অনেক মানুষ লোকনাথ বাবার আশ্রমে এসে সমবেত হন।এছাড়া গীতা পাঠ, বাল্যভোজ, লোকনাথের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ, প্রসাদ বিতরণ ও আরতি কীর্তন সহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান।বারদী লোকনাথ আশ্রম শুধুমাত্র হিন্দু ধর্ম দের তীর্থস্থানই নয়, বরং ধর্ম- বর্ণ -জাতি নির্বিশেষে সকল ধর্মের, সকল মানুষের কাছে এক মিলন মেলা হিসেবে পরিচিত।

লোক শিল্প মেলাঃ

সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে মাসব্যাপী এই লোক শিল্প মেলা হয়ে থাকে। তবে পহেলা বৈশাখের আগেও এই মেলা হয়। এই মেলায় বসে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক জামদানি শাড়ী।এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে। খাবার জিনিসের দোকানও বসে যেমন মুড়ি মুড়কি, ঝিলাপি ইত্যাদি।বাচ্চাদের জন্য নাগরদোলা সহ আরো বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রীর দোকান বসে।

বাংলার তাজমহলঃ

পানাম নগরী থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বাংলার তাজমহল অবস্থিত। আগ্রার তাজমহলের আদলেই পেরাব গ্রামে আহসানুল্লাহ মনি বাংলার তাজমহল গড়ে তুলেছেন। তিনি জানান এই তাজমহলের রেপ্লিকাটি তৈরি করা হয়েছে যেন তার দেশের দরিদ্র মানুষ যাদের ভারতে গিয়ে দেখার সমর্থনে তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন নিজের দেশ থেকে।প্রতিদিন ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

জামদানি শিল্পঃ

সোনারগাঁয়ের উল্লেখযোগ্য একটি ঐতিহ্য হচ্ছে জামদানি শিল্প।হস্তশিল্পের মধ্যে সবচেয়ে ভালো একটি পন্য হচ্ছে জামদানি শাড়ি। বাঙালি নারীদের একটি পছন্দের শাড়ি হচ্ছে জামদানি। মুসলিমের ওপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়িকে বোঝানো হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না, জামা ও পর্দা প্রভৃতি তৈরি করা হয়। জামদানি শাড়ি দেশের বাহিরেও বিক্রি করা হয়। অর্ডার দিয়ে বানানো যায় জামদানি শাড়ী। এই শাড়ি বনুনের ওপর নির্ভর করে দাম। বিভিন্ন দামে এই শাড়ি পাওয়া যায়।

লেখক এর মন্তব্যঃ

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সোনারগাঁও। সেখানে গেলে আমাদের সত্যিকার বাংলাদেশ দেখতে পাই। প্রতিবছর শীতের সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী সফরে আসেন এখানে। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য। এই পোস্টটি করুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url