শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য ৮টি খাবার


শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ শুধু গর্ভাবস্থায় হয় না। এই বিকাশটা আসলে একটি চলমান প্রক্রিয়া, বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন পর্যায়ে মস্তিষ্ক বিকশিত হয়। প্রথম কয়েক বছর শিশুর এই বিকাশ খুব দ্রুত হয়। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়াটি ধীরে সম্পন্ন হয়। মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য শুধু খাওয়া দাওয়া করলে হবে না এর জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা পড়তে হবে।
শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য ৮টি খাবার

বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা, বাড়ির লোকদের সঙ্গে খেলাধুলা আবার একা একা খেলা দরকার। খেলাধুলার মাধ্যমে ব্রেনের বিকাশ হয়ে থাকে।
যেমন,

মেমোরি গেম

মেমোরি গেম শিশু ব্রেইনের জন্য খুব উপকারী একটি গেম। এই গেমের মাধ্যমে শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার এই গেমের মধ্যে দিনরাত মগ্ন থাকলে বিপদ। কারণ কোন কিছুই বেশি করা যাবে না। এতে ক্ষতি হয়। এজন্য ৩০ মিনিট বা এক ঘন্টা খেলা প্রয়োজন।

শারীরিক ব্যায়াম

ছোট থেকেই শিশুকে খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর ব্রেনের বিকাশ ঘটে। যেমন, যত বেশি দৌঁড়াঝাপ, তত শরীরে রক্ত সঞ্চালন বেশি হবে এবং তত বেশি সুস্থ থাকবে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে দৌঁড়ঝাপ, খেলাধুলা, ব্যায়াম ও মেডিটেশনের কোন তুলনা নেই।


প্রতিযোগিতামূলক খেলা না খেলে, শিশুকে মনের আনন্দে খেলতে দিতে হবে, যাতে মানসিক চাপ কম থাকে। মানসিক চাপ কম থাকলে ব্রেনের বিকাশ ভালো হবে।

সঠিক খাবার খাওয়া দরকার

মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সুষম খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য শিশুকে সঠিক খাবার খাওয়াতে হবে যাতে করে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। চলুন জেনে নেই পুষ্টিকর খাবারের নাম গুলো।

ডিম খাওয়া দরকারঃ

শিশুকে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ানো প্রয়োজন। কারণ ডিমে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। ডিমের দাম কম হলেও, এটি প্রোটিনের উৎস। ডিমে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও লুটেইন। আর রয়েছে কোলিন যা ফুসফুসের জন্য ভালো, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। ডিমের কুসুম আর সাদা অংশ দুটোই শিশুর জন্য উপকারী।

দুধ খাওয়া দরকারঃ

শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে দুধের কোন বিকল্প নেই। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই দুধ। প্রতিদিন শিশুকে এক গ্লাস দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। দুধ খেতে না চাইলে দই করে খাওয়াতে পারেন। দইও মস্তিষ্ক বিকাশের সহায়ক।নিউরোট্রান্স মিশন আর মস্তিষ্কের টিস্যুর সুস্থ বিকাশের জন্য উপকারী হচ্ছে দই। টক দই খাওয়া অনেক উপকার মিষ্টি দই এর থেকে।

বাদামের পুষ্টিগুণঃ

বাদামে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন রকম বাদামে বিভিন্ন রকম ভিটামিন রয়েছে।
বাদাম মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। কাজুবাদাম, চীনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, আলমন্ড, ওয়ালনাট এই সব ধরনের বাদাম শিশুকে খাওয়ানো যাবে। এ বাদাম গুলো যদি শিশুর না খেতে চায় তাহলে বাদাম ব্লেন্ড করে গুড়ো করে রেখে, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারবেন।

সবুজ শাকসবজিঃ

সবুজ শাকসবজি খাওয়া ছোট থেকে বড় প্রত্যেকটি মানুষের প্রয়োজন। কারণ এই শাকসবজিতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। যা ব্রেনের জন্য খুবই দরকারি। লাল শাক, পালং শাক, পুদিনা পাতা, ধনেপাতা, মূল শাক, সরিষা শাক, ডাটা শাক, হেলেঞ্চা শাক এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আর নানা রকম ঔষধি গুন। শিশুরা যখন খাবার খেতে শুরু করে, তখন খিচুড়ির সঙ্গে নানা রকম সবজি, শাক আর ডাল দিয়ে থাকে। এভাবে শিশুকে ছোট থেকে সবজি খাওয়ানো শেখাতে হবে।

সামুদ্রিক মাছ ও মাংসঃ

তৈলাক্ত মাছ ও সামুদ্রিক মাছে মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এগুলো তো রয়েছে প্রোটিন, জিংক, আইরন,কোলিন, আয়োডিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শিশুকে মানসিকভাবে চটপটে হতে হতে সাহায্য করে। মাংসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা শিশু মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত করেন। মাছ কিংবা মাংসের স্যুপ করে খাওয়াতে পারেন। খিচুড়ির সঙ্গে মাংস মিশিয়ে খাওয়াতে পারে। তিন বছরের কম বয়সী শিশুকে দুই থেকে তিন দিন সামুদ্রিক মাছ দেওয়া যেতে পারে।

মিষ্টি কুমড়া এবং লাউঃ

মিষ্টি কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গাতে রয়েছে আয়রন ভিটামিন সি ও এ।এই খাবারগুলো শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সবজি সব সময় বাজারে পাওয়া যায়। সবজি গুলো মিষ্টি হওয়ার কারণে শিশুরা খেতে পছন্দ করে।

দানাদার শস্যঃ

দানাদার শস্য যেমন- ময়দা, ভুট্টা, তিল, ওটস্‌, কালোজিরা এসব খাবার শিশুর মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তের গ্লুকোজ নিঃসরণকে স্থিতিশীল এবং ধীর করে, ফলে শিশু সহজে যে কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। শিশুকে ছোট থেকে এই খাবারগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।

ওটস জাতীয় খাবারঃ

ওটস প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার রয়েছে। এছাড়া ওটসে রয়েছে জিংক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন ই। ওটস স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। ওটস দুধের সঙ্গে রান্না করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। এই খাবার শিশু খুবই পছন্দ করে।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ

শিশুর জন্য ঘুম খুবই উপকার। ঘুমানোর ফলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে। এতে করে শিশুর পড়াশোনার মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

শিশুকে যখন কোন কিছু খাওয়াবেন তখন অল্প পরিমাণে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।কোন কিছুই বেশি খাওয়া যাবে না। এতে শিশুর ক্ষতি হতে পারে। কোন খাবারে পেট খারাপ হলে সেটা বন্ধ রাখতে হবে। এলার্জি থাকলে সেই খাবারটা আর দেওয়া যাবে না। এভাবে শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সাথে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url