প্রতিদিন সকালে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে যে ৮টি উপকার মিলবে
রসুন আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি। স্বাস্থ্যের জন্য রসুন খুবই উপকারী। বিভিন্ন রকম তরকারির সাদ বাড়ানোর জন্য রসুন ব্যবহার করে থাকে। রসুন আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করলেও প্রাচীনকাল থেকে রসুন ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন এক কোয়া রসুন খেলে আপনার স্বাস্থ্যের বেশ কিছু উন্নতি হবে।
রসুনে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং বায়ো একটিভ যৌগ রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
রসুনে রয়েছে থিয়ামিন ( ভিটামিন বি ১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি ২) , নায়াসিন ( ভিটামিন বি ৩), প্যানটো থ্যানিক অ্যাসিড ( ভিটামিন বি ৫) , ভিটামিন বি ৬, ফোলেট ( ভিটামিন বি ৯) ও সেলেনিয়াম।
আরো পড়ুনঃ
এছাড়া রসুনে রয়েছে এলিসির নামে এক জরুরী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ক্যান্সার সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এই এলিসির নাম উপাদানের কারণে রসুনকে সুপার ফুড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রসুনের উপকারিতাঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
রসুন পুষ্টিগুনে ভরপুর, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, বি ৬, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলিনিয়াম। এই উপাদান গুলো থাকার কারণে ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত রসুন খেলে সর্দি ও ফ্লু দূরে থাকে। খালি পেটে রসুন খেলে এই উপকার বেশি।
রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করেঃ
রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। কাঁচা রসুনের প্রধান রাসায়নিক উপাদান এলিসিন, যা রক্তনালী গুলোকে শিথিল রাখতে ও রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা থাকবে না।
কোলেস্টেরলের মাত্র কমায়ঃ
কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি টোটাল কোলেস্টেরল ও এলডিএল কোলেস্টেরল ( যাকে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়) কমাতে সাহায্য করে এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল ( যা ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়) বাড়িয়ে দেয়।
ত্বক ভালো রাখে, ব্রণের উপকার করেঃ
প্রতিদিন খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোন দাগ থাকে না। ব্রণ ভালো হয়ে যায় এবং দাগ দূর হয়ে যায়।
অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করেঃ
রসুন খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক এর মতন কাজ করে। রসুনে থাকা এলিসিন বিভিন্ন রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অসুস্থতার তীব্রতা কমিয়ে দেয়।
বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করেঃ
রসুনের সালফার যৌগ শরীরের টক্সিন ( বিষাক্ত বর্জ্য ) এবং ভারী ধাতু দূর করতে সাহায্য করে। রক্তে সীসার মাত্রা কমাতে পারে। এটি এমন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণে সাহায্য করে।
হাড়ের শক্তি বাড়ায়ঃ
৩৫ বছরের পর মেয়েদের বিভিন্ন কারণে হাড়ের শক্তি কমে যায়। নিয়মিত দুই গ্রাম করে রসুন খেলে মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা ভারসাম্য থাকে, ফলে হাড়ের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। রসুন খাওয়ার ফলে হাড়ের শক্তি বাড়ে।
হৃদপিন্ডের শক্তি বর্ধকঃ
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন পানি দিয়ে খেলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি কারণে হৃদপিন্ডের ব্লগগুলো আর বাড়বে না এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না , বুকে ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে না।
কাঁচা রসুনের অপকারিতাঃ
কাঁচা রসুনের উপকারিতা অনেক বেশি হলেও খাওয়ার আগে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। রসুনের কিছু কিছু গুণের জন্য অনেক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রসুন কেটে ১০ মিনিটে রেখে দিতে হবে। এ সময় রসুনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অ্যালিসিন তৈরি হয়।এই উপাদানটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া যাবেনা। অল্প পরিমাণে খেতে হবে। রসুন এক চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। সালাদে ও মিশিয়ে খেতে পারেন। অন্যান্য খাবারের সঙ্গেও খেতে পারেন।
- প্রথমে অল্প পরিমাণে খেতে হবে। তারপর অর্ধেক কোয়া দিয়ে শুরু করতে হবে। এরপর এক কোয়া খেতে পারেন। এতে আপনার পাকস্থলী ওন্ত্র ঠিক থাকে।
- রসুনে রয়েছে সালফার, যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। তাই খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। আবার দীর্ঘদিন রসুন খেলে ঘাম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কখন, কিভাবে রসুন খাবেন?
সকালে খালি পেটে রসুন খেতে হবে এমন নয়। রসুন ভরা পেটে খাওয়া ভালো। দুপুর- বিকেল বা রাতে খেতে পারে। রসুন খেতে হবে কাঁচা। দিলে ১ থেকে ২ কোয়া। কাঁচা না পারলে আচার করে খেতে পারেন।
শেষ কথাঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, রসুনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে। সেজন্য অল্প পরিমানে খেতে হবে। বেশি করে খাওয়া যাবে না। যদি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url