ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সমূহ


শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম একান্ত প্রয়োজন। ঘুম কম হওয়া একটি সমস্যা যা অনেক লোকের জীবনে দেখা যায়। ঘুম কম হওয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষই নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত। এই সমস্যায় শিশু কিশোররাও ভুগছেন।
ঘুম কম হওয়ার কারন কি


একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে বয়স অনুযায়ী ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত পূর্ণবয়স্ক মানুষের ৭-৮ ঘন্টা, শিশুদের ৯-১৩ ঘন্টা, নবজাতক বাচ্চাদের ১২-১৭ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুমানোর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, টক্সিন নামক পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।

আরো পড়ুনঃ

ঘুম ভালো হলে কাজে মনোযোগ বসে। প্রত্যেকটি কাজ করতে আগ্রহ জাগে। আর ঘুম ভালো না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। বয়স্ক লোকদের ঘুম কম হয়। এই সমস্যায় এখন প্রায় মানুষই ভুগছে। অনিদ্রাকে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলছে কেউ কেউ।

অনিদ্রা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ

ঘুম কম হওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা কয়েক রাত যদি ঘুম না হয় তাহলে সেটি ডায়াবেটিস এর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। এ ধরনের নিদ্রাহীনতা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শরীরের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ঘুম কম হওয়ার কারণে শর্ট টাইম মেমোরি লস থেকে শুরু করে হেলুসিনেশন, এমনকি মস্তিষ্ক বিবৃতির দিকেও নিয়ে যেতে পারে।

অনিদ্রা দূর করার উপায়ঃ

অনেকে ঘুমের সমস্যার কারণে ঘুমের ঔষধ খেয়ে থাকেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার ফলে, এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এর ফলে ঔষধ না খেলে স্বাভাবিকভাবে আর ঘুম আসে না।

অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করার ফলে মানুষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। এটি মানুষের হার্ট ও ব্রেনের রক্তনালীর রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। ঔষধ সেবন বন্ধ করে প্রাকৃতিক উপায়ে কিভাবে ঘুম আসবে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে।

অনিদ্রার লক্ষণঃ

  • বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসেনা।
  • রাতে অনবরত হাঁটাহাঁটি করা।
  • তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাওয়া ও পরে ঘুম না আসা।
এই ধরনের সমস্যা যতদিন থাকবে তত বেশি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে।

অনিদ্রার কারণে বিভিন্ন রকম সমস্যার দেখা দেয়ঃ

  • অমনোযোগ, অস্থিরতা ও স্মৃতি হ্রাস।
  • শক্তি ও অনুপ্রেরণার অভাব।
  • অস্তিত্ব, হতাশা ও উদ্যোগ।
  • মাথা - ব্যথা, শরীরে- ব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি।

ঘুমের সমস্যা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায়ঃ

রাত জেগে কাজ না করাঃ

যারা রাত জেগে কাজ করেন তাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। রাতে কাজ করে তারা সাড়া দিন ঘুমিয়ে রাতের ঘুমের অভাব পূরণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। রাতের ঘুমের অভাব দিনে পূরণ করা যায় না।

প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়াঃ

প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সকালে একই সময়ে উঠতে হবে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

চা কফি থেকে দূরে থাকাঃ

চা কফি খাওয়ার ফলে অনেকের ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু চা কফি নয় ড্রিংকস পানিও ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। এগুলো খাওয়া বন্ধ করতে হবে তাহলে ঘুম ভালো হবে।

ফোন ল্যাপটপ দূরে রাখুনঃ

ঘুমানোর আগে ফোন ল্যাপটপ দেখা উচিত নয়। এর ফলে চোখে ঘুম আসে না।ঘুমের সমস্যা দূর করতে চাইলে ঘুমানোর আগে মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ দেখা যাবে না।

কলা খাওয়া প্রয়োজনঃ

অনিদ্রা কমাতে কলা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কলাতে আছে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা মাংসপেশী শিথিল করে দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে। এজন্য যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত কলা হওয়া প্রয়োজন।

গরম দুধ খাওয়া প্রয়োজনঃ

গরম গরম দুধ খাওয়ার ফলে ঘুমের সমস্যা দূর হয়ে যায়। গরম দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামে এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা ঘুমাতে সাহায্য করে।

মধু খাওয়া প্রয়োজনঃ

মধু খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকার। এজন্য মধুকে বলা হয় সর্ব রোগের মহা ঔষধ। প্রতিদিন এক চামচ মধু খাওয়ার ফলে ঘুম ভালো হয়। এটি শরীরের ইনসুলিনের এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমাতে মধু ভূমিকা পালন করে।

ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবারঃ

ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেশি শিথিল থাকে এবং ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। যেমন ডার্ক চকলেট, বাদাম ও অ্যাভোকাডো এগুলোতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। রাতে এগুলো খেলে ভালো উপকার পাবেন।

লেখকের মন্তব্যঃ

পরিশেষে বলা যায় যে, সুস্থ থাকার জন্য ঘুম একান্ত প্রয়োজন। ঘুম ভালো না হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। এজন্য এই নিয়ম কানুন মেনে চললে আপনি উপকার পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url