চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও অপকারিতা
বর্তমান সময়ে মানুষ খাবার নিয়ে খুব সচেতন।কোন খাবারে বেশি পুষ্টি রয়েছে সেই খাবারটি খাওয়ার জন্য মানুষ বেশি চেষ্টা করে। যে যে খাওয়ার এ বেশি পুষ্টি রয়েছে সেই খাবারটি খাওয়ার জন্য বেশি উতলা হয়ে ওঠে। এরমধ্যে চিয়া সিড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা- ৩ ফ্যাটি এসিড। একে সুপারফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড যুক্ত করেছে। কারণ বীজ জাতীয় যে কোন খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার।
চিয়া সিড কি?
মরুভূমি অঞ্চলের সালভিয়া নামক উদ্ভিদের এই বীজ চিয়া সিড। এটি মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে পাওয়া যায়। সাদা, কালো ও বাদামী রং এর চিয়া সিড গুলো আকারে খুবই ছোট, অনেকটা তিলের মতো। পানিতে ভেজানোর ফলে চিয়া সিড ফুলে ওঠে ১২ গুণ পর্যন্ত।
আরো পড়ুনঃ
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ চিয়া সিড খেয়ে আসছে। অ্যাজটেক এবং মায়ান সভ্যতার সময়ে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি রূপচর্চায় এটি ব্যবহৃত হয়। এর অনেক ঔষধ গুন আছে বলে বিশ্বাস করত অ্যাজটেক ও মায়ান আদিবাসীরা। সে কারণে সাধারণ অসুখে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল তাদের মধ্যে।
চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণঃ
চিয়া সিড বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ,কোয়েরসেটিন,কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম।
চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে একটি। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে ২ গুন পটাশিয়াম, মুরগির ডিমের চেয়ে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।
চিয়া সিড সপ্তাহে সাত দিনে খাওয়া যাবে। তবে ৩-৪ দিন খেলেও শরীরের উপকার হবে।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতাঃ
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি - অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করে।
- মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখে বলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
- চিয়া চিড শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে আনে। দূর করে গ্যাসের সমস্যা।
- চিয়া সিড খাওয়ার ফলে ঘুম হয় ভালো এবং হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা কমায়। এর পাশাপাশি এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।
- চিয়া সিডে রয়েছে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- দিনে দুই চামচ চিয়া সিড খাওয়ার ফলে শরীরের শক্তি যোগায় এবং কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ
চিয়া সিড এর স্বাদ ও গন্ধ নেই।এটি খাওয়ার জন্য রান্না করার প্রয়োজন হয় না। পানিতে ভিজিয়ে সহজে খাওয়া যায়। এটি ওটস, পুডিং, জুস ও স্মুথি ইত্যাদি সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
তবে খাওয়ার আগে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
চিয়া সিডের অপকারিতাঃ
- প্রতিটি খাবারের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে। তেমনি চিয়া সিডের কিছু অপকারিতা রয়েছে।
- চিয়া সিড বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।তাই অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। শরীরের কোন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ করা উচিত।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন স্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
- চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তাই অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- গবেষণায় জানা গেছে,চিয়া সিড প্রোটেক্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার কে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই বেশি বেশি না খেয়ে সীমিত পরিমানে খাওয়া ভালো।
পরিশেষে বলা যায় যে, সব জিনিসেরই ভালো খারাপ থাকে। চিয়া সিডের ভালোর পরিমান বেশি হলেও কিছুটা খারাপ প্রভাব ও দেখা যায় মাঝে মাঝে। এটা ব্যবহারের উপর নির্ভর করে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url